তামিম ইকবালের ব্যাটে খারাপ হাওয়া ভর করলে সেটার ঝাপটা আকরাম খানের ওপর দিয়েও কিছুটা যায়। তিনি তামিমের চাচা, আবার ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকও। তামিম খেলছেন চাচার প্রভাবে, এমন একটা সমীকরণ তাই সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন ‘অবুঝ ক্রিকেটপ্রেমী’রা।
তাহলে তামিম ভালো খেললে সেটির কৃতিত্বও কি কিছুটা পাওয়া উচিত নয় আকরামের? তিনি ‘প্রভাব’ না খাটালে যে তামিম এত দিন দলেই থাকতেন না! কাল মুঠোফোনে রসিকতাটা করতেই কলকাতা থেকে হেসে উঠলেন আকরাম। তবে ওই প্রসঙ্গে একেবারেই না গিয়ে খাঁটি ক্রিকেট পরিচালনা প্রধানের মতো বললেন, ‘সব খেলোয়াড়ই আমার কাছে সমান। কেউ কমবেশি নয়। তবে তামিমকে অভিনন্দন জানাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি করায়।’
আকরামের কাছে তামিমের এই সেঞ্চুরির অন্য একটা মাহাত্ম্য আছে। তিনি এখন দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে পারছেন, ‘ও প্রমাণ করল, এ রকম কোনো ক্রিকেট নেই যেটা সে খেলতে পারে না। তামিম এখন পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটটা শুদ্ধভাবে খেলতে শিখে গেছে।’ তামিমকে এই ‘স্বীকৃতি’ শুধু ওমানের বিপক্ষে করা ঝোড়ো সেঞ্চুরি দেখেই দিচ্ছেন না আকরাম, তাঁর চোখে বরং ভ্রাতুষ্পুত্রের হল্যান্ড ম্যাচে খেলা অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংসই বেশি মর্যাদা পাচ্ছে, ‘আমার মনে হয়, ওই ইনিংসটাই বেশি ভালো ছিল। সেঞ্চুরি অনেক বড় অর্জন। তবে সেদিনের ইনিংসটা অনেক বুদ্ধিদীপ্ত ছিল।’
এবারের এশিয়া কাপের আগেও বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা বলা হতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে। সেই এশিয়া কাপেও তামিম দুই ম্যাচ খেলে রান পাননি। অথচ বিশ্বকাপে কিনা তাঁর ব্যাটই ছড়াচ্ছে হাজার বাতির রোশনাই! বাকিদের সঙ্গে কোথায় তৈরি হলো ব্যবধান? আকরামের বিশ্লেষণ, ‘ও খুব দ্রুত শিখতে পারে। এটাই তাকে এগিয়ে দিয়েছে।’
দলের সঙ্গে আকরামও এখন ভারতে। ধর্মশালা থেকে দিল্লি হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় কলকাতা পৌঁছেছেন। পরশু রাতে খেলার পর সময় হয়নি, কালও দিল্লি-কলকাতা করে তামিমের সাফল্যটা সেভাবে উদ্যাপন করতে পারেনি দল। তামিমের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলা হয়নি আকরামেরও। তবে আকরামের হয়ে কাজটা করে দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সাবিনা আকরাম। ফেসবুকে বেশ কয়েক লাইনের এক স্ট্যাটাসে পরশু রাতেই তামিমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘তুমি বাবা হওয়ার পর থেকে দোয়া করছিলাম যাতে একটা ১০০ করো। কারণ, তোমার বাবা হওয়ার মিষ্টি বাংলাদেশের সব মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব নয়। আজকের (পরশু) এই শতক দিয়ে তুমি দেশের সব মানুষের মুখে হাসি এনে দিয়েছ। তুমি যেন সব সময় দেশের মানুষকে এভাবে খুশি করতে পারো, আল্লাহ পাকের কাছে এই-ই প্রার্থনা।’
আকরামের দুহাত অবশ্য শুধু তামিমের জন্য প্রার্থনাতেই প্রসারিত নয়। তাঁর চিন্তাজুড়ে পুরো বাংলাদেশ দল এবং সুপার টেনের ম্যাচগুলো। পরশুর ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে ব্যাট হাতে সপ্রতিভ দেখে ভালো লেগেছে আকরামের। তাঁর চাওয়া এখন একটাই, ‘মুশফিক এবার রানে ফিরলেই হয়। সুপার টেনে সেটা দরকারও। বড় দলগুলোর পক্ষে তো এক-দুজনের পক্ষে ম্যাচ জেতানো সম্ভব হবে না। সবাইকে ভালো খেলতে হবে।’
সুপার টেন তাহলে হয়ে উঠুক বাংলাদেশেরই একটি পরিপূর্ণ দল হয়ে ওঠার মঞ্চ।
No comments:
Post a Comment