Sunday, March 13, 2016

ছেটরা অবহেলিত কেন? আইসিসি

 প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ৮ রানে হেরে গেলেও পরের দুটি ম্যাচে ভালো করে সুপার টেনেই উঠতে চেয়েছিল হল্যান্ড। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় ডাচদের এখন দেশে ফেরার প্রস্তুতিই নিতে হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি হতাশার সুরে বললেন, ‘আমাদের সময়, উদ্যম, পরিশ্রম সবকিছুই বিফলে গেল। আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে আরও চার বছর!’

একই অবস্থা আয়ারল্যান্ডের। একই অবস্থা ওমান, আফগানিস্তান, হংকং—বিশ্ব ক্রিকেটের সব উদীয়মান শক্তিরই। এই দেশগুলো ভালো ক্রিকেট খেলে, বাহবা পায়, টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে মাঝে-মধ্যে ভীতির মধ্যে ফেলে দেয়, কিন্তু নিজেদের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারে না। একটা জায়গায় এসে থেমে যায় এই দেশগুলোর অগ্রযাত্রা। একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির ঘেরাটোপে পড়ে খাবি খেতে হয় নিরন্তর।

সবাই বলেন, এটা নাকি বিশ্বায়নের কাল। গোটা দুনিয়া একটা বৈশ্বিক গ্রাম। কিন্তু প্রসঙ্গটা যখন ক্রিকেট, এসব বাক্সবন্দী আপ্তবাক্যই মনে হয়। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির বদনাম আছে আগে থেকেই। পৃথিবীর প্রতিটি খেলাই যেখানে তাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে গেছে, সেখানে ক্রিকেট হেঁটেছে সম্পূর্ণ উল্টোপথে। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ ১০ দলে সীমাবদ্ধ করে ফেলার পর আইসিসির সমালোচনা কিন্তু কম হয়নি।
হল্যান্ড,আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, হংকং, ওমান, আরব আমিরাত কিংবা নেপালের মতো দেশগুলো বিভিন্ন সময় আইসিসির বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাগুলোতে খেলেছে। হল্যান্ড-আরব আমিরাত তো বিশ্বকাপ খেলেছে আজ থেকে ১৯ বছর আগেই। আফগানিস্তান সাম্প্রতিককালে ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রশংসা পেলেও এই দেশগুলো কেন যেন ক্রিকেটে এগিয়ে যেতে পারছে না। ক্রিকেটে এক সময় সাড়া জাগানো সহযোগী সদস্য দেশ কেনিয়া তো এখন ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রায় বিস্মৃত এক নামই।

এই দেশগুলো কেন এগিয়ে যেতে পারছে না, এই আলোচনায় হল্যান্ড অধিনায়কের কালকের মন্তব্য টেনে আনতেই হচ্ছে.... ‘আমাদের আরও অপেক্ষা বাড়ল।’ কোনো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে কোনো সহযোগী সদস্য রাষ্ট্রের বিদায়ের পর অপেক্ষার পালাটা যে দীর্ঘ, সেটা তো নতুন করে বলে বোঝানোর দরকার নেই। সহযোগী সদস্য দেশগুলোর অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতটাই কম যে এদের দীর্ঘ অপেক্ষা ছাড়া গতিও নেই। এই জায়গাটাতে আইসিসি আসলে কী করছে, সেই প্রশ্ন করাই যায়।

যেকোনো খেলাতেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিয়মিত খেলার সুযোগ না পেলে উন্নতি করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই জায়গায় বাংলাদেশ ও কেনিয়াকে মুখোমুখি দাঁড় করালেই যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হয়ে এই দুটো দেশ ক্রিকেটের বৈশ্বিক পরিসরে পা রাখলেও দুই দেশের উন্নতির ধারা কিন্তু এক নয়। কয়েকজন দুর্দান্ত ক্রিকেটার থাকায় কেনিয়া হয়তো মাঝখানে বেশ ভালো করেছে, কিন্তু ধীরলয়ে হলেও উন্নতির গ্রাফটা কিন্তু ধারাবাহিকতার সঙ্গে ওপরের দিকে নিয়ে গেছে বাংলাদেশই। এর একমাত্র কারণ নিয়মিত খেলা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দুটি দেশ একসঙ্গে খেললেও ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা বাংলাদেশের সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই জায়গাটাতেই ঘাটতি ছিল কেনিয়ার। এই মুহূর্তে একসময় প্রায় সমশক্তির এই দুটি দেশের অবস্থান ভাবুন, পরিষ্কার দেখা যাবে বড় দলগুলোর বিপক্ষে নিয়মিত খেলার পরিমাণের পার্থক্য অবস্থানেরও পার্থক্য তৈরি করেছে কেনিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে।

হল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড-আফগানিস্তান কিংবা হংকং-আরব আমিরাত-ওমান-নেপাল প্রভৃতি দেশও কেনিয়ার ঝুঁকিতে আছে। এই দেশগুলো নিজেদের মধ্যে প্রচুর ক্রিকেট খেললেও বড় দলগুলোর সঙ্গে এদের খেলার সুযোগ নেই বললেই চলে। যে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এরা বড় দলগুলোর বিপক্ষে মাঠে নামার সুযোগ পেতো, সেই প্রতিযোগিতাগুলো সংকোচনের মাধ্যমে সহযোগী সদস্য দেশগুলোকে আরও বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আইসিসি। সহযোগী সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে নিচের সারির টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর শক্তির পার্থক্য বেশি, তাই অদূর ভবিষ্যতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে আদৌ কোনো সহযোগী দেশ খেলার সুযোগ পাবে কি না, সেই শঙ্কাটা থেকেই যায়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কৌশলে এই দেশগুলোকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। র‍্যাংকিংয়ের ধোঁয়া তুলে এই প্রতিযোগিতায় এদের অংশগ্রহণ একটা জায়গায় বন্দী করে ফেলা হয়েছে। হল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড কিংবা হংকংয়ের এখানে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার সুযোগ নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে হল্যান্ডের অধিনায়কের দু:খ হবে , সেটা তো জানাই।

No comments:

Post a Comment