Friday, March 11, 2016

তামিমের মারমার কাটকাট ব্যাটিং

 বিকেলে হল্যান্ড অধিনায়ক পিটার বোরেন মাঠ ছেড়েছেন বৃষ্টিকে অভিশাপ দিতে দিতে। ঘণ্টা কয়েক পর আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডও তা-ই। মাশরাফি বিন মুর্তজা যখন সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর মুখে প্রশস্ত হাসি।
এক সাংবাদিক পরদিন অনুশীলন কখন জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘কাল আমরা পাহাড়ে অনুশীলন করব। আপনারা সবাই আসবেন।’ রসিকতা এর আগেও করেছেন। মাঠের মাশরাফির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের মাশরাফির এখন জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দুই জায়গাতেই সমান উজ্জ্বল। ক্রিকইনফোর সাংবাদিক মুস্তাফিজের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়ায় একটা হাসি দিয়ে জবাব দিলেন, ‘আপনি ভাই মুস্তাফিজের প্রেমে পড়েছেন। প্রতিদিনই ওকে নিয়ে প্রশ্ন করেন।’
হল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডের জন্য এটি ছিল টুর্নামেন্টে টিকে থাকার দিন। বৃষ্টি শেষ চেষ্টাটাও করতে না দেওয়ায় তাদের মন খারাপ তো হবেই। বাংলাদেশের অবশ্য এই বৃষ্টিতে কিছু আসে যায় না। আগামীকাল ওমানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটাও যদি বৃষ্টিতে ভেসে যায়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। মাশরাফি অবশ্য বৃষ্টির কল্যাণে পাওয়া ১ পয়েন্টের আলাদা কোনো মাহাত্ম্যই দেখছেন না, ‘এই ম্যাচে জিতলেও পরের ম্যাচটা আমাদের জিততেই হতো। তবে একেবারে না হওয়ার চাইতে একটু খেলা হওয়াটা ভালোই হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা রান পেয়েছে। ওমানের বিপক্ষে এটা কাজে লাগবে।’
একটু খেলা বলতে ৮ ওভার। ব্যাটসম্যানরা রান পাওয়া বলতে তামিম ইকবাল। ওই ৮ ওভারেই ২ উইকেটে ৯৪। তারপরও পুরো খেলা হলে একটু দুশ্চিন্তা ছিলই। ‘পুরো খেলা’ মানে ২০ ওভার নয়—১২ ওভার। হল্যান্ড-ওমান ম্যাচে একটা বলও হয়নি। মাঠ থেকে কাভারই তো সরেনি। এই কাভার সরিয়ে নেওয়া হয় তো আবার তা নিয়ে ছুটে আসতে হয়—এমন করতে করতে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ শুরু হলো স্থানীয় সময় সোয়া নয়টায়। নির্ধারিত সময়ের পৌনে দুই ঘণ্টা পর। কত ওভারের খেলা হবে, এ নিয়েও নাটক। প্রথমে জানানো হলো ১৩ ওভার, একটু পরই ১২। ‘যাহা বারো তাহাই তেরো’, এতে কিছু আসত যেত না।
যেটিতে আসতে-যেতে পারত, সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ টসটা হেরে বসেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ১৫ ওভারে নেমে আসা এশিয়া কাপ ফাইনালের টসটা হারা নিয়ে আগের দিনও আক্ষেপ করেছেন। ম্যাচ যত ছোট হয়, পরে ব্যাটিং করা দলের তত সুবিধা। এখানে সেই সুবিধাভোগী আয়ারল্যান্ড।
পরে ব্যাটিং করলে টার্গেটটা জানা থাকে বলে হিসাব করে খেলা যায়। কিন্তু ১২ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করা দল কত রানকে যথেষ্ট বলে মনে করবে? এটা যেহেতু জানার উপায় নেই, শুরু থেকেই চালাতে হবে। এই মন্ত্র নিয়েই শুরু করলেন তামিম ইকবাল। প্রথম তিন বলে ১ রান নিয়েছিলেন, পরের দুটি বলেই ছয় আর চার। সৌম্যও একই পথে হাঁটতে গিয়ে দু-দুবার ক্যাচ দিলেন। দুবারই বেঁচে যাওয়ার পরও ইনিংসটাকে ১৩ বলে ২০-এর বেশি করতে পারলেন না।

ব্যাটসম্যানরা টানা ভালো খেললে ‘আগের ম্যাচটা যেখানে শেষ করেছিলেন, পরের ম্যাচটা সেখান থেকেই শুরু’ কথাটা খুব প্রচলিত। যেটি তামিমের ক্ষেত্রে খুব খেটে যায়। হল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ৮৩ রানে। সেই ইনিংসটিরই যেন আবারও শুরু। যা মারছেন, তা-ই ব্যাটের মাঝখানে লাগছে। ২৬ বলে ৪৭ করে যখন ফিরে যাচ্ছেন, ১২ ওভারের অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও বাংলাদেশ অনেকটাই নিশ্চিন্ত।

তামিমের মনে অবশ্য আফসোস থাকতেই পারে। একটা বল আগে বৃষ্টি নামলেই তো এ দিনও অপরাজিত থেকে যেতেন। বৃষ্টি পড়ছিল অনেকক্ষণ ধরেই। তামিম আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার আগেই সেটি এমন জোরে নামল যে, খেলা না থামিয়ে আর উপায় থাকল না। ক্রমেই বেড়ে চলা বৃষ্টিধারা সেটি আর শুরুর কথা ভাবারই অবকাশ থাকল না।

বাংলাদেশকে মাঠে একটু অচেনাই লাগছিল কাল। প্রথম ম্যাচে এক জার্সি, কাল আবার অন্য রকম। সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি কৌতূহলের জবাব দিলেন ‘এটা আমাদের অ্যাওয়ে জার্সি’ বলে। তাহলে প্রথম ম্যাচের জার্সিটা কি ‘হোম ম্যাচের’ ছিল? মাশরাফির মুখে হাসি, ‘সে রকমই।’ তা ক্রিকেটে আবার ফুটবলের মতো ‘হোম’ আর ‘অ্যাওয়ে জার্সি’ আলাদা হয়ে গেল কবে? তা ছাড়া এখানে তো দুটি ম্যাচই এক মাঠে। এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আইসিসির নতুন নিয়মে। দুই দলের জার্সির রং মিলে গেলে এক দলকে জার্সি বদলাতে হবে। কারা বদলাবে? ফিকশ্চারে যে দলের নাম আগে থাকবে। র্যা ঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দল পেয়েছে সেই অধিকার। এখন বাংলাদেশ ১০ নম্বরে, আয়ারল্যান্ড ১৬। এই বিশ্বকাপের দল চূড়ান্ত করার সময় আয়ারল্যান্ড কি তাহলে র্যা ঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ওপরে ছিল? হয়তোবা! প্রায় দুই বছর আগের কথা মনে রাখা কঠিন।
নতুন জার্সির বাংলাদেশের কাছে এই ম্যাচটার ভিন্ন একটা তাৎপর্যও ছিল। তাসকিন-সানির বোলিং অ্যাকশন প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে যা জানালেন মাশরাফিই, ‘এই ম্যাচটা আমরা ওদের দুজনের জন্য খেলতে নেমেছিলাম।’ বাংলাদেশ এর আগে সতীর্থ কোনো খেলোয়াড়ের জন্য খেলতে নেমে হেরেছে বলে ইতিহাস নেই।
না, ১২ ওভারে কমে জটিল হয়ে যাওয়া ম্যাচের পুরোটা হলেও বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হতো বলে মনে হয় না!

No comments:

Post a Comment